এনামুল কবির সবুজ, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কোরবানির ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেশবপুরের গরু খামারীরা ও কৃষক। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে এই উপজেলায় যে পরিমাণ গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয় তা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন খামারিরা। তবে এ বছর কেশবপুর শহর ও আশেপাশের গ্রাম মিলে প্রায় দেড় লক্ষাধিক কোরবানির গরু নিয়ে বিপাকে খামারীরা ও গ্রামোর কৃষক।
বর্তমানে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে দেশ জুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ১ লা জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন দেওয়ায় খামারীরা হতাশায় ভুগছেন। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে কোরবানির পশু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছেন কেশবপুর উপজেলার খামারীরা।
বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গরুর সব রকম খাদ্যের দাম। এমন অবস্থায় গরু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও সঠিক দাম পাওয়া যাবে কিনা এসব নানাবিধ বিষয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খামারীরা।
কেশবপুর উপজেলার খামারি বাদে প্রতিটি বাড়িতেই দু’একটি গরু আছে। এখানকার খামারী ও কৃষকরা কোরবানির ঈদের পরে কমদামে ছোট গরু কিনে অল্প অল্প করে টাকা বিনিয়োগ করে এসব খামারে ও বাড়িতে পারিবারিক আদলে গরুকে মোটা তাজা করেন। বিশেষ করে বড় সাইজের গরু এবার দেখা যাচ্ছে কেশবপুর উপজেলার ৭ নং পাঁজিয়ার লেপাকাটি গ্রাম ও গড়ভাংঙ্গা নতুনহাট রামচন্দ্রপুর সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সেখানে খামার ও বাড়ীতেও পোষা গরু গুলো ইতি মধ্যেই ক্রেতাদের নজর কেড়েছেন। কেশবপুরের পাঁজিয়ায় শারমিন সুলতানার নবাব নামে একটি বিশাল আকারের গরু যার দাম হেকেছে ১২ লাখ টাকা। ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদককে।
কেশবপুর উপজেলার বেলকাটি গ্রামের গরুর খারামী সাহাদাৎ হোসেন জানান, কোরবানির পশু বাজারে তোলার সময় ঘনিয়ে এলেও মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
এছাড়াও তারা বলেন, আসছে কোরবানির জন্য দেশে যথেষ্ঠ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং খামারীদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে ভারত থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কোরবানির জন্য দেশীয় গরু হিসেবে যশোর জেলার গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কেশবপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার কোরবানির জন্য খারামি ও গ্রাম্য গরু দিয়ে প্রায় দেড় লাখ গরুকে মোটা তাজা করা হয়েছে। এটা আমাদের কেশবপুর সহ অন্যান্য অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৭০ শতাংশ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। এছাড়াও এবার ৫০ হাজার ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি এটাও বলেন, কোনো রকম ক্ষতিকর উপাদান ছাড়াই মাঠের ঘাস ও স্বাভাবিক খাবারে এসব গরু মোটা তাজা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। খামারীদের গরু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির করার জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামারীরা এবার কোরবানির গরুর নায্য দাম পাবেন বলেও জানান তিনি।
গত বছরের মতো এবারও লোকসান হলে কেশবপুরের খামারীরা আগামীতে গরু পালন থেকে সরে আসবে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে সজাগ থাকার দাবি জানিয়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।