বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঘোষণা :

কেশবপুর ভরত রাজার দেউল ভিন্ন মাত্রার পর্যটন কেন্দ্র

 

নাসির উদ্দিন নয়ন স্টাফ রিপোর্টার যশোরঃ এবার ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়। আর তা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের হাতের কাছেই। স্থানটি ভরত রাজার দেউল। অবস্থান যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলা। অনুসন্ধানী মনের জানালা খুলতে বা ভ্রমণ পিপাসু মনের ক্ষুধা মেটাতে আমরা সবাই প্রতি বছর কোনো না কোনো দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে বের হই। ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে তারা পাখা মেলে উড়িয়ে দেন মনের পর্যটক সত্ত¡ায়। তারা ইতিহাসের ভরত রাজার দেউল ঘুরে আসতে পারেন নিশ্চিন্তে।বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে উড়িষ্যা। দার্জিলিং জলপাইগুড়িও ছিল তার পরিধী। এই বিশাল দিগন্ত পর্যন্ত ছিল যশোর রাজ্য। বাংলার অপরিসীম গৌরবের সেই বিশ্ব ইতিহাস আরেকটি অধ্যায় উন্মোচন হয়েছে এই ভরত রাজার দেউলে। সাবেক সুন্দরবন অংশে বর্তমান যশোরের কেশবপুর উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরত ভায়নায় অবস্থিত ভরতের দেউল পর্যটকদের জন্য হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান। উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল অবস্থিত। রাজা দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী রাণী কৈকেয়ীর গর্ভজাত পুত্র ভরত রাজার নাম অনুসারে ভরতের দেউল নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রæতি রয়েছে। খুলনা ও যশোর জেলার সীমান্তে কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন যুগের অনেক নিদর্শন নিয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিক হিসাবে কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রায় ১৮০০ বছর আগে থেকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ভরত রাজার দেউল। খানিকটা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো দেখতে এই প্রতœতত্ত্ব নিদর্শনটি। কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিন ভ্যান অথবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগে অনায়াশে পৌঁছানো যায় এই দেউলে। খ্রিষ্টীয় ২য় শতকে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী তৎকালীন সরকার এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন।প্রতœতত্ত¡ বিভাগ ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালায়। খননের ফলে ভরত দেউলের পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে চলে আসে। বর্তমান দৃশ্যমানেও যার গড় উচ্চতা ৫০ ফুটের উপরে। ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট পাদদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। এর প্রথম অংশে বিভিন্ন আকারের স্থাপনা, দ্বিতীয় অংশে একটি মঞ্চ, তৃতীয় অংশে মূল মন্দির। খননের ফলে দেউলের ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত ৯৪টি কক্ষ দেখা যায়। স্থাপনাটির ৪ পার্শ্বে বর্ধিত আকারে ১২টি কক্ষ অনুমান করা যায়। বাকী ৮২টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির চূড়ায় ৪টি কক্ষ এবং পার্শ্বে ৮টি কক্ষ রয়েছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে চার পার্শ্বে তিন মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। খনন কালের মধ্যে পোড়া মাটির তৈরি নারীর মুখমন্ডল, দেবদেবীর নৃত্যের দৃশ্য সম্বলিত টেরাকোটার ভগ্নাংশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এ যাবৎ প্রাপ্ত টেরাকোটার মধ্যে এটি বৃহৎ আকৃতির। তাছাড়া নকশা করা ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তি পাওয়া যায়। এ অঞ্চলে অন্য কোন পুরাকীর্তিতে এত বড় আকারের ইট ব্যবহৃত হয়নি। এসব নকশা করা ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তির ভগ্নাংশ সমুহ সাগরদাঁড়ী মধুপল্লীর প্রতœতত্ত¡ বিভাগে সংরক্ষিত রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ভরত রাজার দেউল হতে পারে ভিন্ন মাত্রার পযর্টনকেন্দ্র। এছাড়াও কেশবপুর উপজেলা বিভিন্ন দিক দিয়ে সু-প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। এখানে কবি সাহিত্যিক নবাবের বসত বাড়ি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি মির্জানগর হাম্মামখানাসহ জমিদার ও রাজাদের রাজত্বের অনেক দর্শনীয় স্থান। সুযোগ পেলেই যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন এই পর্যটনের লীলাভূমি ভরতের দেউল।প্রতœতত্ত¡ বিশেষজ্ঞরা প্রাচীন এ নিদর্শনে ব্যবহৃত ইট ও পোড়ামাটির মূর্তি গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন, এটি খ্রিষ্টীয় ৩-৬ শতকে নির্মিত একটি মন্দির। দেশে এমন আদি ঐতিহাসিক যুগের স্থাপনা খুব কমই আছে। জানা মতে, ভরত ভায়না মন্দির দক্ষিণ বঙ্গের একমাত্র আদি ঐতিহাসিক যুগের স্থাপনা।এবিষয়ে খুলনা বিভাগীয় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রিজিওনাল ডাইরেক্টর (আরডি) আফরোজা খান মিতা বলেন, পুরাকীর্তি হিসাবে ওই দেউলকে সরকারি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সেনিটেশন ব্যবস্থাসহ দেউলকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার চিন্তা রয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা